নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলায় ভয়াল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণকে উপেক্ষা করে সব্জির ঝুলি পিঠে নিয়ে বাঁশের লাঠিতে ভর করে আস্তে আস্তে হাটছে মোসলেম মোল্যা।

তার বয়স ৯৮ বছর। এই বয়সেও জীবন জীবিকার টানে থেমে নেই মোসলেম। পিঠে সব্জির ঝুলি নিয়ে বেচাকেনা করছে বাঁচার তাগিদে সে।

গত সোমবার (২৮ জুন) দুপুরে লোহাগড়া উপজেলার প্রধান সড়কের সামনে মোসলেম মোল্যার সঙ্গে কথা হয় এসময় প্রতিবেদকে তিনি জানান, তার জন্ম নড়াইল সদর উপজেলার আউড়িয়া ইউনিয়নের মুলদাইড় গ্রামে। সংসারে তার স্ত্রী ও চার কন্যা সন্তান রয়েছে।

অভাব আর অনটনে সঙ্গে যুদ্ধ করে চার কন্যা সন্তানকে আগেই বিয়ে দিয়েছেন। বিয়ের পর তার কন্যা সন্তানরা শশুর বাড়িতে ভালোই আছে।

আলাপকালে তিনি জানান, তার নিজের কোন জায়গা-জমি নাই। অন্যের বাড়িতে একটি ঝুপড়ি ঘর তুলে মানবেতর ভাবে জীবনযাপন করছেন বৃদ্ধ মোসলেম। অভাবের তাড়নায় বয়সের ভারে ন্যূজ মোসলেম মোল্যা আর্মি স্টাইলে পর্বত আরোহীদের মতো সব্জি পিঠে করে বিভিন্ন বাড়িতে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেন।

এ দিয়ে তার স্ত্রী কে নিয়ে কোন রকম দিনাতিপাত করছেন।

তিনি অত্যন্ত আবেগপ্রবন হয়ে এ প্রতিবেদককে বলেন, আমি কোন সরকারি অনুদান পাই না, এমনকি আমাকে কেউই একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড পর্যন্ত করে দেয়নি। তার সাথে যখন কথা হয় তার কপাল দিয়ে ঘাম ঝরছিল ও চোখে-মুখে ছিল ক্লান্তির ছাপ। গ্রামের বিভিন্ন পরিত্যক্ত জায়গা থেকে কচুর লতি, ঘাটকোল, কচুর ডগা, কলমি শাক ও থানকুনির পাতা ইত্যাদি সংগ্রহ করে বিভিন্ন এলাকার বাড়িতে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেন তিনি।

বৃদ্ধ মোসলেম একজন ধর্মপরায়ন মানুষ, তিনি ৫ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। সৎভাবে উপার্জন করে বেঁচে থাকতে চাই, এ জন্য কষ্ট হয়! তবুও ভিক্ষাবৃত্তি করতে চাইনা। আজ আমার যদি একটা ছেলে থাকতো, হয়তো আমার এ বয়সে এতটা কষ্ট করতে হতো না।

সত্যি বলতে কি বয়স অনেক হয়েছে এখন আর কষ্ট করতে পারিনা,যদি আমার একটা বয়স্ক ভাতার কার্ড হতো বা কেও আমার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতো তাহলে হয়তো।
এ কষ্ট থেকে কিছুটা আছান পেতাম! সব্জির ঝুলি নিয়ে আর মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হতো না। আপনারাতো জানেন এই করোনা মহামারীর লকডাউনকে উপেক্ষা করে দুমুঠো ভাতের জন্য আমাকে এ কাজ করতে হচ্ছে, এ বয়সে যদি করোনায় আক্রান্ত হই তাহলে আর রক্ষা হবে না।

অসহায় ভূমিহীন বৃদ্ধ মোসলেমের সহযোগিতায় সমাজের বিত্তবান মানুুষরা এগিয়ে আসবেন-এমন প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।